নিঝুম দ্বীপ গেছিলাম সেই ২০১০এ একবার। ভার্সিটি থেকে পাশ করার পর তখন সবে ঘোরাঘুরি শুরু
করেছি।আমাদের একটা ছোটখাটো গ্রুপ মতো আছে বন্ধুরা মিলেই।আমাদের প্রতিবছর শীতে একটা টার্গেট
থাকে নতুন কোন জায়গায় ক্যাম্প করার। গতবছর করেছিলাম সোনাদিয়ায়।এবছর অনেক গবেষণার পর বের
হলো নিঝুম দ্বীপেই হবে আমাদের ক্যাম্প। নিঝুম দ্বীপ যাবার ব্যাপারটা একটু ঝামেলার তাই খুব চিন্তাভাবনা
করে প্ল্যান করা হলো। খুজে টুজে মোটামুটি ১০ জনের একটা গ্রুপ দাড়িয়ে গেলো। তাঁবু ম্যানেজ করা হলো ৩ টা।
প্ল্যান হলো ডিসেম্বরের ৯ তারিখ যাবো। সুতরাং সেইমত তাঁবুর সব জিনিসপত্র, কোথায় থাকা হবে তার একটা
মোটামুটি প্ল্যান হলো। এখন খালি যাবার অপেক্ষা ।
নিঝুম দ্বীপ হলো মেঘনা নদীর মোহনায় গড়ে ওঠা বিশাল চর এলাকা। চিটাগং থেকে নিঝুম দ্বীপ যাবার
সবচাইতে পপুলার রু্যট টা হলো নোয়াখালী চেয়ারম্যানঘাট হয়ে। সকাল ৮ টার সীট্রাক ধরে আমরা চলে গেলাম
হাতিয়া নলচিড়া ঘাটে।গিয়ে দেখি বেশ অবাককরা ব্যাপার। এতো মানুষ যে যায় হাতিয়া আমাদের ধারণা ছিলো
না।সীট্রাকে তিলধারণের জায়গা নেই।আমরা কোনমতে একটা বসার জায়গা খুজে পেয়েছিলাম অবশ্য!
আমাদের সাথে আরো দুটো কাপল এবং একটা পিচ্চি ও ছিলো। ওরা মূলত আমাদের রাজেশের পরিচিত। সব মিলাই বিশাল
এক গ্রুপ পেয়ে আমরা বেশ উত্তেজিত! হাতিয়া নেমে দেখি আমাদের জন্য পুলিশের জিপ দাড়িয়ে.. আসলে উনারা
সবাই হলেন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। উনাদের কল্যাণে মোটামুটি ভালই একটা যাবার ব্যবস্থা হয়েছিলো…জিপে
আমরা রওনা দিলাম। এবার যেতে হবে হাতিয়ার মোটামুটি শেষ মাথা নিঝুম দ্বীপের ঘাটে । ওখান থেকে ছোট
ট্রলারে যাবো নিঝুম দ্বীপ।
নিঝুম দ্বীপের ঘাটে পৌছানোর পরপরই বেশ ক্ষিদে লেগে গেছিলো সবার.. সবাই হেবি নাস্তা করে নিলাম। সাথে
গরুর দুধের চা। এগুলো হলো ট্রিপের স্পেশাল পাওনা..কেউ মনে হয় দুকাপের কম খায়নি! যাই হোক নিঝুম দ্বীপ
যেতে যেতে তখন প্রায় দুপুর ৩ টা বাজে। আমরা নেমেই সব মটরসাইকেলে উঠে গেলাম।এবার যেতে নিঝুম
দ্বীপের আরেক প্রান্তে। ওখানেই সবার থাকার ব্যবস্থা। নিঝুম রিসোর্ট বেশ সুন্দর। সামনে একটা
ছোটখাটো মাঠমতোন আছে। বারবিকিউ, ক্যাম্পফায়ার সবই মোটামুটি করা যায়। ওখানে আমাদের কাপল গ্রুপের
জন্য ২ টা আর আমাদের ব্যাচেলর পার্টির জন্য ১ টা রুম বুক দেয়া হয়েছে। আমরা তো আসলে তাঁবুতেই থাকবো
তবুও অনেক বড় গ্রুপ। তাই সেফটি হিসেবে এটা করা হয়েছিলো ।
খাওয়াদাওয়া শেষ করেই আমরা দ্বীপ ঘুরতে বের হয়ে গেলাম। ওখান থেকে খুব কাছেই বিচ এরিয়া। আমরা পুরো
বিকেলটা ওখানেই কাটিয়েছিলাম…বিশাল সীবিচ এরিয়া, সূর্য ডুবছে, আমরা ছাড়া আর তেমন কোন ট্যুরিস্ট
গ্রুপও নাই…প্ল্যান হলো রাতে এখানেই ক্যাম্প হবে। আমরা বেশ ছবি টবি তুলছি। আর ক্যাম্পের জায়গাটা
ফিক্সড করে হোটেলে চলে এলাম।
সবাই বেশ টায়ার্ড। সবাই মোটামুটি হাল্কা রেস্ট নিয়ে নিলাম নাইলে রাতে
মজা হবে না! হোটেলটার রান্না বেশ ভালো। সবাই হেবি খাওয়া দাওয়া করে নিলাম। এখন আমরা সেই চরে চলে
যাবো। কিন্তু পোলাপানের পা যেনো চলছেই না।যেখানে বসে তো বসেই থাকে। রাত দেড়টার দিকে মনে হয় সবাই
ক্যাম্পসাইটে গেছিলাম ।
এবার কাজ টেন্ট পিচ করা। পূর্ণিমা ছিলো ভালোই। এসব কাজে ওস্তাদ কিছু পোলাপান সাথেই আছে। কিন্তু কি
যে বাতাস! টেন্টগুলো পিচ করার পর মনে হচ্ছিলো ভেসে যাবে.. আমরা ব্যাকপ্যাক দিয়ে টেন্টগুলো সব সাপোর্ট
দিয়ে দিলাম….এখন নেক্সট কাজ আগুন জ্বলতে হবে। ক্যাম্পফায়ার না হলে কি হয়!. কেরোসিন আছে, সাথে
পোলাপান খুজে কোথক কাঠ নিয়ে আসছে… দাও আগুন! কি আছে জীবনে….আমাদের সাথে ফানুস থাকে মঁটামুটি
সব টূুরেই..এখন ফানুস ওড়াতে হবে! কিন্তু কি যে বাতাস.. ফানুসগুলো উপরের দিকে ওড়ার কোন প্রেশারই পাচ্ছে
না.. ওগুলো কেমন ডিগবাজি খেয়ে সমুদ্রের দিকে চলে যাচ্ছে.. ওড়ার বদলে ডিগবাজি খেতে দেখাটা একটা অদ্ভুত
অভিজ্ঞতা বটে!
এরপর আর কাজ কি! সবাই আগুনের পাশে গোল হয়ে বসে আছি…আর আজগুবি সব আলাপ চলছে.. আকাশে
প্রচুর তারা….তখন প্রায় ৪ টা বাজে সবাই খুব টায়ার্ড… ঘুমাতে তো যেতে হবে পরদিন পুরো নিঝুম দ্বীপ
ঘোরার প্ল্যান। সুতরাং তাঁবুতে ঢুকো আমি ভুলে একটাতে ঢুকে গেছিলাম, বাতাসের সাথে একটু অ্যাঙ্গেল
ছিলো। ঘুমে চোখ পগে যাচ্ছে,তখন খেয়াল টেয়াল নাই।সকাল ৬ টায় দেখি শীতে মনে হয় মারাই যাবো । টেন্টের
নিচ দিয়ে হুহু করে বাতাস ঢুকছে, আমি কাঁপতে কাঁপতে উঠে গেছি ,আর হাত পা স্ট্রেচ করছি। হাইপোথার্মিয়া
হয়ে যায় কিনা! সূর্য ওঠার জন্য এর আগে এতো কাতর কখনো হয়েছি কিনা জানা নেই ।
(চলবে)
আর্টিকেলটি নিয়ে আলোচনা