হুট করেই সিদ্ধান্ত নেই ঘুরে বেড়াবো জেলা থেকে জেলা। যেই চিন্তা সেই কাজ। ফোন লাগাই জয়পুরহাট। আমন্ত্রণ মিলে আরেক বন্ধুর। যাকে বলে গায়ে পড়ে দাওয়াত নেয়া।অবশ্য অনেকে আবার দিলেও নেই না। ব্রট মাইন্ড দোস্তদার দাদন মুন্সী বলে কথা। যথারীতি ভোর চারটায় গাড়ী ষ্ট্রাট।ড্রাইভার সহ পাঁচজন। গাড়ীর নাম যেমন এলিয়ন কামও সেই রকম। যেই বনে বাঘ নেই সেই বনে শেয়ালও রাজা। ফাঁকা সড়ক পেয়ে গাড়ী ছুটে তীব্র গতিতে। হেসে খেলে যাওয়ার পথে জেলায়-জেলায় চা পানের অজুহাতে ব্রেক দিয়ে,বিভিন্ন দোকানির মজাদার খাবার চেখে দুপুর একটার মধ্যেই পৌছাই সবুজের মাঝ দিয়ে ছুটে যাওয়া গাড়ী জয়পুরহাট জেলা সদরের সবুজ নগরে। বন্ধু সদর দরজায় এসে এগিয়ে নিয়ে যায়।
বাসায় ঢুকে কাপড়-চোপড় ছেড়ে, চলে ফেলে আসা দিনের গল্প-গুজব। ঘন্টাখানেক পর ভিতর থেকে ডাক আসে ডাইনিংএ বসার। অতঃপর মিসেস সুরভি মেমের মুচকি হাসী মাখা আপ্যায়ণ। ভাবির নাম যেমন সুরভি ঠিক তেমনি তাঁর হাতের রান্নাতেও সৌরভ ছড়ায়। নানান পদের মজাদার সব খাবার খেয়ে ভাতিজা সৌহার্দর ভরাট কন্ঠে পুরনো দিনের গান শুনে, ছুটি নওগাঁর পাহাড়পুর বিহার। বিহারের অবস্থান নওগাঁ জেলা হলেও জয়পুরহাট সদরের পাশে বদলগাঁছি উপজেলায় অবস্থিত ঐতিহাসিক নিদর্শন পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার। প্রাইভেট কারে অল্প সময়ের মধ্যেই পৌছে যাই বিহার প্রান্তর। ইতিহাসের স্বাক্ষী পাল রাজবংশের শৈর্য-বির্য বহনকারী পাহাড়পুর বিহার। বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায়
অর্ন্তভূক্ত এই বিহারের আরেক নাম সোমপুর মহা বিহার। এর ঐতিহাসিক ও প্রত্মতাত্বিক গুরুত্ব অপরিসীম। যা পাল বংশের কয়েক শতাব্দীর আর্থ সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের পরিচয় বহন করে। বিশাল আয়তনের এই স্থাপনার চতুর্দিক ভিক্ষু কক্ষ বিস্তৃত প্রবেশ পথ। নিবেদন স্তুপ, ছোট ছোট মন্দির ও অন্যান্য ঐতিহাসিক নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে। সু-উচ্চ একটি কেন্দ্রিয় মন্দির রয়েছে। মন্দিরটির দৈর্ঘ্য উত্তর-দক্ষিণে ১১২.৪০ মিটার এবং প্রস্থ পূর্ব-পশ্চিমে ৯৫.৭৮ মিটার। মন্দিরে দেয়ালের বর্হিভাগ অলংকৃত ইট, উদগত কার্ণিশ ও পোড়ামাটির
ফলক দিয়ে অলংকৃত করা হয়েছে। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ধ্বংসাবশেষ হিমালয়ের দক্ষিণে সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ বিহারের পরিচয় বহন করে ।
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের প্রকৃত নাম ছিল সোমপুর বিহার। এ বিহার পাল বংশীয় দ্বিতীয় রাজা ধর্মপাল কর্তৃক ৭৭০-৮১০ খ্রিঃ নির্মিত। বিহার কম্পাউন্ডে বর্তমানে একটা যাদুঘর রয়েছে। বিশাল আয়তনের পুরো বিহার জুড়ে রয়েছে সবুজের সমারোহ। নানান ফুলের বাগান, পাতা বাহার গাছ গুলোকে দক্ষ হাতে শৈল্পিক রুপ দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে একটি সুন্দর বিকেল কাটিয়ে দেয়া যাবে বেশ আয়েশি ঢংয়ে। এরপর সন্ধায় চলে যাই দিনাজপুরের হিলি স্থল বন্দর। চোখের সামনেই দেখি অনেক কিছু। অনিয়মই যেখানে নিয়মের মাপকাঠি সেখানে নিয়মের বানী শুনাবে এমন সাধ্য কার আছে শুনি ? তাই বেশিক্ষণ না থেকে মানে মানে কেটে পড়ি।
পরের দিন সকালে সদর রোডে শহীদ আবুল কাশেম ময়দানে অবস্থীত মুক্তিযোদ্বা স্মৃতি স্তম্ভে শহীদদের স্মরণ ও জেলার শেষ সিমানায় নান্দাইলের দিঘী ঘুরে চলে যাই বগুড়ার পথে। আজ এই পর্যন্তই। ইনশা আল্লাহ্; এর পরে হবে বগুড়ার মহাস্থান গড়ের গল্প।
তথ্য ঃ- পাহাড়পুর বিহারে প্রবেশ ফি দেশি পর্যটকদের জন্য ২০/=টাকা এবং বিদেশীদের জন্য ২০০/=টাকা জন প্রতি।
যোগাযোগঃ-পাহাড়পুর বিহারের অবস্থান নওগাঁ জেলাতে হলেও ঢাকা থেকে যাঁরা যাবেন তাদেঁর জন্য যাতায়াতের সুবিধা বেশি হবে জয়পুরহাট জেলা সদর হতে। ঢাকার গাবতলী বাস টার্মীনাল হলে বিভিন্ন পরিবহনের বাস দিনে রাতে জয়পুর হাটের উদ্যেশে ছেড়ে যায়।এ/সি নন এ/সি দুই ধরনের বাস সার্ভিস রয়েছে।ভাড়া ৪৫০/= হতে ৮০০/=টাকা পর্যন্ত। শহর থেকে অটোতে বৌদ্ব বিহার, জন প্রতি ভাড়া ৩০/=টাকা নিবে।
থাকা-খাওয়াঃ-শহরের পূর্ববাজার ও স্টেশন রোডে বেশ কিছু ভালো মানের আবাসিক হোটেল ও খাবার রেস্টুরেন্ট রয়েছে। ভাড়া নাগালের মধ্যেই। আমি শুধু ধারণা দিলাম মাত্র বাকিটা আপনি আপনার সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী সেরে নিবেন।
ছবিঃ-দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ
আর্টিকেলটি নিয়ে আলোচনা