সাহেব বিবির মসজিদঃ মালকা বানুর দেশেরে…. বিয়ার বাইদ্য আল্লাহ বাজে রে… মূলতঃ যাত্রাপালার হাত ধরেই এই গান বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ে! ‘৭০ এর দশকে শাবানা আর জাভেদ রুপালী জগতেও চিত্রায়িত করেছিলেন মালকা বানুকে! তবে আজ মালকা বানুকে নয়,মালকা বানুর মায়ের অসাধারণ এক কীর্তিমান স্থাপনা নিয়ে বলবো( মালকা বানু আর মনু মিয়া অন্যদিনের জন্য তোলা থাকুক)। কেউ বলেন আনুমানিক ৮০০ বছর, কারো মতে এত না হলেও নিদেনপক্ষে ৬০০ বছর তো হবেই! প্রত্নতাত্ত্বিকরা অবশ্য ৫০০ বছর হবে বলে মনে করেন।
হ্যাঁ, সাহেব বিবির মসজিদের কথাই বলছি,চট্টলার কিংবদন্তী চরিত্র মালকা বানুর মা হন যিনি। জমিদার আমির মুহাম্মদ চৌধুরীর স্ত্রীও বটে উনি! মোগল আমলে এই মসজিদ নির্মিত হয়েছে বলে জনশ্রুতি আছে। চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের হাঁড়ি চৌধুরীর বাড়ি সংলগ্ন ইতিহাস বিখ্যাত সাহেব বিবির মসজিদ। ইট, চুন, সুড়কি আর টেরাকোটার মিশ্রণে এই মসজিদ তৈরী।৩টি দরজা,৮ টি পিলার ও ১টি গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদে ১০০ জন মুসল্লী নামাজ আদায় করতে পারেন।লোকমুখে জানা যায় এই মসজিদের পাশাপাশি আরো বাইশটি মসজিদ তৎকালীন আমলে নির্মাণ করা হয়েছিলো। বাকী মসজিদগুলো সম্বন্ধে খুব একটা তথ্য কেউ দিতে না পারলেও এই ঐতিহ্যবাহী সাহেব বিবি মসজিদ এবং পাশ্ববর্তী মৎস্য বিবি মসজিদ সম্বন্ধে এলাকাবাসীর মুখ থেকে অনেক কথাই শোনা যায়। মসজিদের লাগোয়া কবরস্থানে সাহেব বিবির কবরও দেখতে পাওয়া যায়।এই মসজিদের ঐতিহ্য সংরক্ষণে এলাকাবাসী বেশ সচেতন।অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে মান্নতের উদ্দেশ্যে অত্র মসজিদে ছুটে আসেন; ছুটির দিনগুলোতে দর্শনার্থীরাও আসেন।
এলাকাবাসীর মুখেই শোনা যায়, তৎকালীন আমলে নির্মাণ সামগ্রীর অপ্রতুলতার মধ্যেও এই মসজিদ নির্মাণের সাহস দেখিয়েছিলেন সাহেব বিবি ; কালের বিবর্তনে মসজিদে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে ঠিকই, কিন্তু মসজিদের মুল কাঠামো এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। সামনের দরজায় দেয়া হয়েছে পবিত্র ক্বাবা শরীফের দরজার আদল।এলাকাবাসীর আবেগ আর গর্ব যুগপৎভাবে মিশে রয়েছে এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদের সাথে।জমিদার আমির মুহাম্মদ চৌধুরী মুলতঃ বাঁশখালী অঞ্চলের জমিদার হলেও তাঁর ও তাঁর বংশের লোকদের হাত ধরে পুরো চট্টলা জুড়েই প্রভুত উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছিলো। বলে রাখা ভালো আমির মুহাম্মদ চৌধুরী ছিলেন গৌড় সাম্রাজ্যের সেনাপতি আজিম গৌড়ের বংশধর। এলাকায় এইমসজিদ ও পার্শ্ববর্তী মৎস্য বিবি মসজিদ ঘিরে অনেক কিংবদন্তী চালু আছে।যথাযথ নজরদারী করা হলে হেরিটেজ ট্যুরিজমের জন্য আদর্শ স্থান হতে পারে এই পবিত্র মসজিদ ও তৎসংলগ্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো। ইতিহাস গবেষকদের চারণভূমি হতে পারে মোগল সাম্রাজ্যের সাক্ষী এই মসজিদ।যাদের হাত ধরে এই মসজিদ নির্মিত হয়েছে চট্টলার ইতিহাসের পাতায় উনারাও আজ বিস্মৃত প্রায়। এই মসজিদ ঘিরে হতে পারে সেই বিস্মৃত ইতিহাসের চর্চা।প্রত্নতত্ত্ব ও ইতিহাস সংরক্ষণ সংশ্লিষ্টদের নজরে আনা গেলে এই মসজিদ পর্যটকদের মনের খোরাক জোগাতে পারে। তো,একদিন বেরিয়ে পড়ুন না! ইবনে বতুতা স্টাইলে। ইবনে বতুতা যা দেখেছেন তা-ই লিখে রেখেছেন, আপনারা না হয় যা দেখবেন, তা দিয়ে বানিয়ে ফেলবেন আপনাদের নেক্সট ভিডিও ব্লগ!
চট্টগ্রাম শহরের যে কোন জায়গা থেকে প্রথমেই আপনাকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা আসতে হবে, সেখান থেকে সিএনজি যোগে জলিলনগর, জলিলনগর থেকে আবার সিএনজি যোগে সাহেব বিবি মসজিদ।কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি যাওয়ার একফাকে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন এই মসজিদে।হতে পারেন এক অনিন্দ্য সুন্দর ইতিহাসের সাক্ষী।
আর্টিকেলটি নিয়ে আলোচনা